একটি সংক্ষিপ্ত মৃত্যু

                                                          আসিফ মাহমুদ জীবন


অন্ধকারে ঠাসা বদ্ধ দেয়ালদুটোর মধ্যে টলতে টলতে মুখ থুবড়ে পড়ে গেল সে, বেরোবার আর কোনো পথ নেই! অবশ্য পথ থেকেও লাভ নেই, বুকের পাজড়ের ভিতরে হাতুড়ি পেটানোর মতো ধুক ধুক শব্দটা বলে দিচ্ছে বিষ ইতিমধ্যেই হৃদপিণ্ডে পৌছে গেছে। হৃদপিণ্ড থেকে এই বিষ ধমনী শিরা আর কৈশিকজালিকা ছাড়িয়ে পৌছে যাবে প্রতিটি কোষ থেকে কোষান্তরে।

হঠাত মুখ থেকে এক খাবলা রক্ত উঠে এলো, এ রক্ত নিশ্চিত মৃত্যুর সংকেত! নিজের রক্ত দেখে নিজেই চি চি করে হেসে উঠল সে, বদ্ধ উন্মাদের হাসি। বাবার মুখটা কি স্পষ্ট মনে আছে তার? কিংবা রান্নাঘরে প্রেমিকার সাথে হওয়া শেষ চুম্বন? সেকেন্ডের শেষ কাটার সাথে প্রতিটি স্মৃতি চোখের সামনে এসে ঘুরছে। ছোটবেলায় মায়ের সাথে রান্নাঘরের লুকোচুরি খেলা,কৈশরে বন্ধুদের সাথে কৌশলে ফাঁদ এড়িয়ে যাবার প্রতিযোগিতা, বিস্কুট খেতে দেখে প্রেমে পড়া প্রেয়সীর মুখ,যৌবনের উত্তেজনায় কেটে যাওয়া সেসব রাত, যমজ সন্তানদের নিষ্পাপ চেহারা, প্রতিটি স্মৃতি এখন সোনার চেয়েও মূল্যবান।

তার দেহ নিস্তেজ হয়ে আসছে, চোখের দৃষ্টি ক্রমশ ঘোলা হচ্ছে। অসহ্য যন্ত্রণায় কুঁকড়ে গেল সারা শরীর, মুখের ভিতর থেকে ফিনকি দিয়ে রক্ত বেরোতে লাগল। বদ্ধ দেয়ালদুটির মাঝে ক্ষণিকের জন্য উঠলো মৃত্যুযন্ত্রণার কোলাহল, তারপর সব নিস্তব্ধ!

মা সোফাটা সরিয়ে চেঁচিয়ে বললেন, “ও জীবন? তাড়াতাড়ি দেখে যা! এইবার একটা ধাড়ি ইঁদুর মরেছে রে! একটা কাগজ দিয়ে লেজটা ধরে বাইরে ফেলে দিয়ে আয় তো।”

কোয়ারেন্টানে বদ্ধ আমি ইঁদুরের মৃত্যুযন্ত্রণাকে সাহিত্যে অলঙ্কৃত করে মাতৃআজ্ঞা পালন করলাম। নুরু মিয়াকে লকডাউনের তুলে নেয়ার পরে একবেলা খাওয়াতে হবে, তার “টিপে টিপে চিকা মারেন” ঔষধ কাজে দিয়েছে।😆


                     


Comments

Post a Comment

Popular posts from this blog