Posts

Image
                                            একটি সংক্ষিপ্ত মৃত্যু                                                           আসিফ মাহমুদ জীবন অন্ধকারে ঠাসা বদ্ধ দেয়ালদুটোর মধ্যে টলতে টলতে মুখ থুবড়ে পড়ে গেল সে, বেরোবার আর কোনো পথ নেই! অবশ্য পথ থেকেও লাভ নেই, বুকের পাজড়ের ভিতরে হাতুড়ি পেটানোর মতো ধুক ধুক শব্দটা বলে দিচ্ছে বিষ ইতিমধ্যেই হৃদপিণ্ডে পৌছে গেছে। হৃদপিণ্ড থেকে এই বিষ ধমনী শিরা আর কৈশিকজালিকা ছাড়িয়ে পৌছে যাবে প্রতিটি কোষ থেকে কোষান্তরে। হঠাত মুখ থেকে এক খাবলা রক্ত উঠে এলো, এ রক্ত নিশ্চিত মৃত্যুর সংকেত! নিজের রক্ত দেখে নিজেই চি চি করে হেসে উঠল সে, বদ্ধ উন্মাদের হাসি। বাবার মুখটা কি স্পষ্ট মনে আছে তার? কিংবা  রান্নাঘরে প্রেমিকার সাথে হওয়া শেষ চুম্বন? সেকেন্ডের শেষ কাটার সাথে প্রতিটি স্মৃতি চোখের সামনে এসে ঘুরছে। ছোটবেলায় মায়ের সাথে রান্নাঘরের লুকোচুরি খেলা,কৈশরে বন্ধুদের সাথে কৌশলে ফাঁদ এড়িয়ে যাবার প্রতিযোগিতা, বিস্কুট খেতে দেখে প্রেমে পড়া প্রেয়সীর মুখ,যৌবনের উত্তেজনায় কেটে যাওয়া সেসব রাত, যমজ সন্তানদের নিষ্পাপ চেহারা, প্রতিটি স্মৃতি এখন সোনার চেয়েও মূল্যবান। তার দেহ নিস্তেজ হয়ে আস
Image
                                                                        প্রেমমৃত্যু                                                                           লেখকঃ আসিফ মাহমুদ জীবন  মনীষা অদ্ভুত রকম নীলভ চোখে সাইমুমের দিকে তাকিয়ে আছে, তার মুখে মৃদু হাসি। মনীষাকে মনিটরের পর্দায় দেখে বিছানাতে শুয়েই প্রচন্ড রকম চমকে উঠেছিল সাইমুম, মেয়েটা যে বেঁচে আছে তা সে কল্পনাও করতে পারেনি! মনীষা এগিয়ে এসে সাইমুমের বাম হাত মুঠোয় পুরে নিল, আঁতকে উঠলো সাইমুম, মেয়েটা করছেটা কি! সাইমুমের মুখের ভাব দেখেই মনীষা হেসে বলল, -“ভয়ের কিছু নেই সাইমুম, COVID-32 এর জিনোম সিকোয়েন্সটাই এমন যে কেউ এ ভাইরাসে আক্রান্ত হবার পর সুস্থ হয়ে গেলে তার ইমিউন সিস্টেম আর ভাইরাসটাকে কাছে ঘেঁষতে দেয় না। সাইমুম জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল, মনীষা ঘাড় সামান্য কাঁত করে বলল- “হ্যাঁ, আমি বেশ কদিন হলো সেরে উঠেছি”। সাইমুম কিছুটা আশ্বস্ত হলো। হঠাত মনীষার চোখদুটো কেমন যেন ভিজে উঠল, আর্দ্র কন্ঠে সে সাইমুমের দিকে ফিরে জিজ্ঞেস করল- “ কেমন আছো তুমি?” সাইমুম তেঁতো হাসল, কেমন আছে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। গত দুই মাস এই বিছানাতেই একপ্রকার পড়ে আছে,
Image
একুশের ভোর পত্রিকায় প্রকাশিত আমার গল্প "“ বাঙালি আগন্তুক”" লেখকঃ আসিফ মাহমুদ জীবন রেহান আমার সামনে ভাঙা চেয়ারে হেলান দিয়ে অন্যান্য বাচ্চাদের মতোই থেকে থেকে হাত-পা নাড়াচ্ছে, জিভ বের করছে, মাথা নাড়ছে, আবার মাঝে মাঝে লুকিয়ে আমার দিকে তাকাচ্ছে। ছেলেটাকে দেখে কেউ বুঝতেও পারবে না যে আট-দশটা বাঙালি বাচ্চাদের মতো সে বাংলা বলতে পারেনা। এতে রেহানের অবশ্য কোনো দোষ নেই, দোষ আপা-দুলাভাইয়ের, বিশেষ করে আপার। হাজার হোক, মাতৃভাষা তো মানুষ মায়ের মুখেই শেখে। আমেরিকায় জন্ম বলে যে শেকড় ভুলে দমাদম ইংরেজিই শেখাতে হবে, এ কি কথা! রেহান ইতস্তত ভাব কাটিয়ে শেষ পর্যন্ত আমাকে চোস্ত ইংরেজিতে জিজ্ঞাসা করল, “ So, you are my uncle? “ আমি ত্যালতেলে হেসে মাথা নুইয়ে সায় দিলাম যে আমিই তার হতভাগ্য মামা। হতভাগ্য বলার যথেষ্ট কারণ আছে। অনার্স শেষ করে যে ছেলে বাপের টাকায় টঙের দোকানে বসে চা খায়, মাঝে মাঝে দোকানের পিছনের দিকে গিয়ে সস্তা সিগারেটও টানে, তাকে হতভাগ্য বললে খুব একটা চোটপাট হবে না। রেহানকে আমি এই প্রথমবারের মতো দেখছি। দুলাভাই আপাকে নিয়ে আমেরিকাতে গিয়েছিলেন বছর আটেক আগে, কাজের ব্যস্ততায়
Image
বইয়ের নামঃ দ্যা এ্যালকেমিস্ট লেখকঃ পাওলো কোয়েলহো অনুবাদঃ মাকসুদুজ্জামান খান বিশ্বসাহিত্যে কয়েক দশক পর পর এমন একটা বই বের হয় যা পাঠকের জীবনকে আমূলে বদলে দেয়। পাওলো কোয়েলহো’র লেখা দ্যা এ্যালকেমিস্ট এমনই একখানি বই। পৃথিবীব্যাপী ২৫ মিলিয়নেরও বেশি বিক্রি হয়েছে এ বই, অনূদিত হয়েছে ৫৪ টি ভাষায়। দ্যা এ্যালকেমিস্ট পাঠকের কাছ থেকে পেয়েছে আধুনিক ক্লাসিকের মর্যাদা। সান্তিয়াগো নামের এক কিশোর রাখালকে নিয়ে এ কাহিনীর অভূতপূর্ব বুনন। মরুপ্রান্তরের ছেলে সান্তিয়াগোর ভ্রমণের নেশা। দেশ-দেশান্তরে সে ঘুরে বেড়ায় নতুনত্বের খোঁজে, নতুন মানুষের খোঁজে, নতুন বইয়ের খোঁজে। পরিবর্তনে মানুষের খুব ভয়, সান্তিয়াগো ভয় পায় না। দুঃসাহসে ভর করে পাড়ি দেয় মরুভূমি, পথে নানা শঙ্কা তবু রক্তে অভিযানের কি অদম্য নেশা! হঠাত সান্তিয়াগো স্বপ্ন দেখে, অদ্ভুত সব স্বপ্ন! সে স্বপ্নের অর্থ ধরে গুপ্তধনের খোঁজে বেরিয়ে পড়ে সে। আবারো নতুন মানুষ, নতুন পরিস্থিতি কিন্তু বুকে স্বপ্ন একটাই, পিরামিড। সান্তিয়াগো প্রতারিত হয় কিন্তু ভেঙে পড়ে না। মরুভূমি তাকে সান্ত্বনা দেয়, দেয় পথ চলার নতুন উদ্যম। রাখাল এই ছেলে জানতে পারে মানুষ বাঁচে প
Image
                                আমার নানাভাই                                                 আসিফ মাহমুদ জীবন গতকাল আমার নানার তেরোতম মৃত্যুবার্ষিকী ছিল। আমার নানা যখন মারা গেলেন তখন আমার বয়স সাড়ে চার ছুই ছুই। বিকেলবেলা তাকে মাইক্রোতে উঠিয়ে মিলিটারি হাসপাতালে নেয়া হলো, তিনি রাতে বাড়ি ফিরলেন লাশ হয়ে। সেই রাতে আমায় কেউ ডাকেনি, আমি নিজেই উঠেছিলাম। মধ্যরাতে চার বছর বয়সি কোনো শিশু যদি ঘুম থেকে উঠে দেখে যে বারান্দার মেঝেতে তারই সর্বক্ষণের বন্ধু নিথর হয়ে শুয়ে আছে আর তাকে ঘিরে পরিচিতরাই গগনবিদারী চীৎকার দিয়ে রাতের আকাশ বাতাস ভারি করে ফেলছে, সেটা আর যাই হোক সুখকর দৃশ্য নয়। আমি অবাক হতে পারিনি, শিশুরা সহজে অবাক হয় না। খুব চুপচাপ হয়ে আমি বারান্দায় ঠেস দিয়ে বসে নানার দিকে তাকিয়েছিলাম, নানার মুখে তখনও সেই শান্ত সৌম্য হাসি। মৃত্যুও সে হাসির সৌন্দর্য ম্লান করতে পারেনি। প্রচণ্ড বিলাপের মাঝে সেই হাসি দেখে আমি কখন সেই রাতে ফের ঘুমিয়ে পড়েছিলাম তা আমার নিজেরও মনে নেই। নানাকে গ্রামের মানুষ জানতেন মিলিটারি নামে। মুক্তিযুদ্ধের পর তার সেনাবাহিনীতে যোগদানের কারণেই সম্ভবত এমন নামকরণ। কৃষিকাজ থেকে শুরু
Image
                              কবিতাঃ আমি সেদিনই বখে গিয়েছিলুম                                                                  আসিফ মাহমুদ জীবন মতির দোকানে সেদিন হিঙরে কচুরি চলছে, ডুবো তেলে ভাজা, দেখলেই জিভে জল আসে বিশ্বাসের ছেলে আধ-খাওয়া কচুরি এক শীর্ণ বোষ্টমির মুখে ছুড়ে বলেছিল,‘লে কুত্তা, খা!’ আমি তখনই লিকলিকে দেহ নিয়ে বিশ্বাসের সেই ষণ্ডা ছেলেকে দুপ্রস্থ ঠেঙিয়েছিলাম, আমি জানি, আমি সেদিনই বখে গিয়েছিলাম। সাইজির গান হয় প্রতি রাতে, আড়ঙের ঘরে প্রাণ জ্বলে একতারায়; ধোয়া ওড়ে না, বোতল গড়াগড়ি যায় না, মাদক ঐ একখানাই, একতারার গান! বাবা বললে,‘ওসব ফকিরে কাজ, ছোটলোকের জাত বিকানো’ সে রাত্তিরে আমার ঘর ফাঁকা রইল, আমি তখন সাইজির গানে ঢুলছি; আমি বেশ জানতুম, আমি সেদিনই বখে গিয়েছিলুম। গল্প পড়ায় সেবার খুব নেশা ধরে গেল, রবীন্দ্র আর বঙ্কিম মিলে রক্তে সৃজনের নাচন জাগাল; পাশের বাড়ির কাকা এসে বাবায় সুবুদ্ধি দিলে, ‘ ছেলের মতিগতি তো সুবিধার নয়, ঘাড় গুঁজে ওসব কি পড়ে! জব্দ করো ক্ষণিকে! কাঁচায় না নোয়ালে বাঁশ, পাকলে করে ঠাস ঠাস।’ বাবা সব বুঝলে, আমার বই বন্দী হলো রঙ্গিন কাঠের ফ্রেমে; যেদিন সাহিত্যের
Image
  ডায়েরির কোনো এক পাতা     আসিফ মাহমুদ জীবন মা বাড়ি নেই পাক্কা তিন দিন হয়ে গেল । বাবা,ছোটভাই আর মা গ্রামে মামাবাড়ি বেড়াতে গেছে, পরীক্ষার চাপে আমি বাড়ি রয়ে গেছি। বাড়িতে মেয়েমানুষ না থাকলে যে কি সমস্যায় পড়তে হয় এখন হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি। ভীষণ খাদ্যসমস্যা ! মা সামান্য রেঁধে রেখে গিয়েছিলেন বটে, কিন্তু তাতে তো ওই দুবেলা টেনে- টুনে চলল, তারপর নিজেরই রেঁধে খেতে হচ্ছে । হোটেলে যে যাব সেই উপায়ও নেই। গত বর্ষায় এক নামিদামি হোটেলে এক পেট খিদে নিয়ে নানরুটির অর্ডার হাকালাম। ওয়েটারের দেরি দেখে আমার আর তর সইল না, নিজেই রান্না ঘরে ঢুকে গেলাম। তার পরের দৃশ্যটা মোটেও সুখকর ছিলো না, একেবারে থিমেটিক দৃশ্য। রাধুনি চাচা উদাস মনে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছেন, তার এক হাত রুটির কাচা খামিরে আর আরেক হাত উত্থিত লুঙ্গির ভিতরে নির্মমভাবে পশ্চাদ্দেশ চুলকানিতে ব্যস্ত।পাশের   দৃশ্যে দেখা গেল বছর বারোর এক চ্যংড়া ওয়েটার অত্যন্ত মনোযোগের সাথে তার রসে ভরা নাকের ভিতরে খোঁচাচ্ছে , যেন সেই মুহূর্তে নাক খোঁচানোর চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ আর নেই। তারপরই সেই হাত দিয়ে সদ্য প্রস্তুতকৃত নানরুটিখানা তুলে আমার টেবিলের দিকে হাটা দিয়েছে। ব
Image
                            গল্পঃ রক্ত ও গোলাপ                                            লেখকঃ আসিফ মাহমুদ জীবন স্কয়ারের নির্জন একপাশ ধরে মাথার উপর ভারী কাপড় জড়িয়ে এলিনা দ্রুত হাঁটছে । এলিনাকে দেখে বোঝা শক্ত যে তার বয়স ত্রিশের কোঠায় । দুপাশে বিনুনি করে চুল বেধে দিলেই চোখে মুখে সদ্য কিশোরিভাব প্রকট হয়ে ওঠে । মস্কোতে শীতকালগুলো বড্ড বেশি ঠান্ডা হয় , গৃহস্থ বাড়িতে চিমনির আগুনের পাশে বসে বাড়ির ছেলেপুলে আর বুড়োরা গল্প জুড়ে দেয় । সেন্ট স্কয়ারের চৌহদ্দি পেরিয়ে আবাসিক অঞ্চলের দিকে দ্রুত পা বাড়ালো এলিনা । তার গায়ে ট্রাকসুটের উপর পশমওয়ালা সুয়েটার , গত শীতে কিনে রেখেছিল , এখন কাজ দিচ্ছে । প্রচন্ড শীতে এলিনার মুখ বরফের মতো সাদা হয়ে আছে , সাদা মুখে লালচে লালচে ছোপ , চোখের দৃষ্টি পাগলের মতো উদ্ভ্রান্ত । মাত্র ঘন্টা তিনেকের ব্যবধানে সাজানো গোছানো জীবনে এমন সাইমুম হানা দেবে তা সে কখনো কল্পনাও করেনি । জুরালিনা ভবনের পাশ দিয়ে নোংরা একখানা শুড়িখানায় ঢুকল এলিনা । বারের দিকে যেতে গিয়েও থমকে দাঁড়ালো সে , না ! ভদকা - মদ কিছুই ছোঁয়া চলবে না । দরকার হলে আগুনের পাশে
Image
বিষয়ঃ আবরার ফাহাদ হত্যা লেখকঃ আসিফ মাহমুদ জীবন সকাল থেকেই মা আস্থিরভাবে এঘর ওঘর ছোটাছুটি করছে। মাঝে মাঝে আমার কাছে এসে নিচুস্বরে জিজ্ঞাসা করছে, “ছেলেটাকে কি সত্যি পিটিয়ে মেরেছে?”। আমি প্রত্যেকবার মাথানিচু করে সায় দিচ্ছি। এ দেশে এর চেয়ে বেশি কথা বলার অধিকার আমার নেই। আবরার হত্যার গল্প আমার অশীতিপর নানির কানেও পৌছেছে। তিনি সারাদিন আমার ঘরে বসে আমার গায়ে হাত বোলাচ্ছেন আর বলছেন, “ নানাভাই রে, তুই ওইসব ফেসবুক-টেসবুকে কি সব লিখিস! আর লিখিস নে রে, তোরও মেরে ফেলবে।” আমি শুনছি আর হাসছি, আমি কি লিখব! বেড়াল হয়ে বাঘের গর্জন করা কি শো ভা পায়! একদমই না! আমি বাঙ্গালির চেতনায় বড় হওয়া বাঙালি, আমার মুখেও কি এসব মানায়! উহু, আমি চুপ করেই থাকব। মা-নানির মিছিমিছি কি সব অদ্ভূত চিন্তা! সাগর-রনি, তকী, তনু, বিশ্বজিৎ, নুসরাত...এরপর লিস্টের নতুন সংযোজন আবরার। লিস্ট যখন আছে, বড় তো হবেই। বাংলার সব সূর্যসন্তানদের ঠাই হবে সে লিস্টে। তারপর একদিন সে লিস্টে কাগজের অভাব পড়বে, সেদিন হয়ত নাম লেখার জায়গাটুকু পাবো না। কি করেছিলো আবরার? ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছিল? ভারতবিরোধী পোস্ট? কেন! কেন এমন পোস্ট দেবে! এ দেশে জন্মেছে, এ দে
Image
কবিতাঃ ভালোবাসা যদি আসিফ মাহমুদ জীবন আচ্ছা প্রিয়? ভালোবাসা যদি শার্টের বোতামে এঁটে দেয়া যেতো! তবে কি প্রতি ক্লান্ত সন্ধ্যায় বুক পকেটের কাঠগোলাপ ছুঁয়ে বলতে, ভালবাসি? আচ্ছা প্রিয়ন? ভালোবাসা যদি চুলের ক্লিপে সেটে দেয়া যেতো! তবে কি বকুল ঘ্রাণের মুগ্ধস্বরে বলতে, ভালবাসি? আচ্ছা প্রিয়ংবদ? ভালোবাসা যদি চিঠির ভাজে লুকিয়ে দেয়া যেতো! তবে কি জানলার ধারে চিঠিখানা মেলে বলতে, ভালোবাসি? আচ্ছা প্রিয়তমেষু? ভালোবাসা যদি জোছনার রঙে মিলিয়ে দেয়া যেতো! তবে কি হন্টণ শেষে মিষ্টি হেসে বলতে, ভালোবাসি? আচ্ছা অনিমেষ? ভালোবাসা যদি কাজলদানীর জলে ঢেকে দেয়া যেতো! তবে কি কাজল কালো চোখে চোখ রেখে বলতে, ভালোবাসি? আচ্ছা অনিন্দ্য? ভালোবাসা যদি কপালের বাঁকা টিপে লাগিয়ে দেয়া যেতো! তবে কি টিপখানা সোজা করে স্নিগ্ধ চাহনিতে বলতে, ভালোবাসি? আচ্ছা আরণ্যক? ভালোবাসা যদি লালপেড়ে শাড়ির রঙে রাঙিয়ে দেয়া যেতো! তবে কি ঘাসের শিশির মুঠোয় এনে বলতে, ভালবাসি? আচ্ছা অহক? ভালোবাসা যদি ভোরের সূর্যে আঁকিয়ে দেয়া যেতো! তবে কি প্রদোষের লালচে আলোয় বলতে,ভালোবাসি? আচ্ছা প্রিয়? ভালোবাসা যদি সত্যিই মিথ্যা না হতো! তবে কি আমায় ভালোবে
Image
কবিতাঃ   আজ থেকে আমি বড্ড ব্যস্ত হয়ে যাব আসিফ মাহমুদ জীবন কোজাগরীর চাঁদ সবে বান ডেকেছে তেঁতুল বনে আজ জোছনার মেলা তবু, আজ থেকে আমি বড্ড ব্যস্ত হয়ে যাব। বৃষ্টির ফোঁটায় আজ প্রেমের ছটা মাদকতায় ভরা তৃষ্ণার্ত অঙ্গ সত্যি বলছি, আজ থেকে আমি বড্ড ব্যস্ত হয়ে যাব। হিমাংশুবৎ প্রিয়তমার কপোল পান্ডুর এলোকেশী ভেজা চুলে ঝরে পড়া জল তাতে কি? আমি আজ থেকে বড্ড ব্যস্ত হয়ে যাব। তিলোত্তমার বীণায় আজ সুর উঠেছে, অনুষ্ণ সে সুরে ছোটে কামনার একাঘ্নী বলেছি তো, আজ থেকে আমি বড্ড ব্যস্ত হয়ে যাব। ওষধিনাথের টানে আজ উত্তাল ঔর্বাম্বু শান্ত সলিলাধার আজ কুন্থনে মুখর দ্বিধা হই, আজ থেকে আমি বড্ড ব্যস্ত হয়ে যাব। জীমূতমন্দ্রের হটাৎ বাকে আজ দিগ্বধূর আগমন তার নিক্কণ গ্রীবার নিক্বতে আমার কান নেই কারণ, আজ থেকে আমি বড্ড ব্যস্ত হয়ে যাব। পদ্মিনীবল্লভ আজ আবির রঙে রাঙা পয়ূদন্ত আমি তাই ভীষণ দিশেহারা তারপরও, আজ থেকে আমি বড্ড ব্যস্ত হয়ে যাব। পাথরে আজ ফুল ফুটেছে মহীরুহ খোঁজে ভালোবাসা ব্যস্ত থাকার ভান করে করে তাইতো বলছি, আজ থেকে আমি বড্ড ব্যস্ত হয়ে যাব।             
Image
 বিষয়ঃ  একজন বইপোকার স্বীকারোক্তি লেখকঃ আসিফ মাহমুদ জীবন  ছোটবেলাতে খুব ভোরে গানের শব্দে আমার ঘুম ভাঙত। নানা কোথা থেকে যেন একখানা রেডিও কিনে এনেছিলেন। প্রতিদিন সকালে বেতারের সাবিনা ইয়াসমিন, রুনা লাইলা, অরুণ চ্যাটার্জি, সুবীর নন্দীর গানে মনপ্রাণ ভরে থাকত। এক একজনের গলা আমার কাছে অতিপরিচিত’র মতো লাগতো। গানের তখন কিই বা বুঝি, দু আঙুলের আঙ্গুলের বাচ্চা আমি তখন! কিন্তু গানের সুরগুলোর অদৃশ্য এক সুতো ছিলো, সে সুতোয় শিশুবয়সেই আমি আটকা পড়েছিলাম। রেডিওখানা টিউন করে বাজিয়ে মামা রোয়াকে বসে শেভ করতেন আর গুনগুণ করে গান গাইতেন। আমি মাঝে মাঝে চিরুনিটাকে ক্ষুর কল্পনা করে মামার পাশে বসে আমার কচি মুখের কল্পিত দাড়ির বংশ নির্বংশ করতাম। গ্রাম ছেড়ে যবে কংক্রিটের শহর আমার নতুন আবাস হলো,এক অদৃশ্য সুর আমার বুকে খুব বেজেছিলো। শিশু আমি সে সুরের নাম দিতে পারিনি, বেদনার সুরের নাম দিতে নেই, বেদনার সুরের রঙ যে নীল হয়! কিন্তু কথায় যে আছে, ‘ মানুষ মরে গেলে পচে যায়, বেঁচে থাকলে বদলায়’। শুধু বদলায় না, ক্ষণে ক্ষণে বদলায়, কারণে অকারণে বদলায়। আমিও বদলে গেলাম, খুব দ্রুতই বদলে গেলাম। আমার বুকে তখন আর সেই