প্রেমমৃত্যু 

                                                                        লেখকঃ আসিফ মাহমুদ জীবন 

মনীষা অদ্ভুত রকম নীলভ চোখে সাইমুমের দিকে তাকিয়ে আছে, তার মুখে মৃদু হাসি। মনীষাকে মনিটরের পর্দায় দেখে বিছানাতে শুয়েই প্রচন্ড রকম চমকে উঠেছিল সাইমুম, মেয়েটা যে বেঁচে আছে তা সে কল্পনাও করতে পারেনি! মনীষা এগিয়ে এসে সাইমুমের বাম হাত মুঠোয় পুরে নিল, আঁতকে উঠলো সাইমুম, মেয়েটা করছেটা কি! সাইমুমের মুখের ভাব দেখেই মনীষা হেসে বলল,

-“ভয়ের কিছু নেই সাইমুম, COVID-32 এর জিনোম সিকোয়েন্সটাই এমন যে কেউ এ ভাইরাসে আক্রান্ত হবার পর সুস্থ হয়ে গেলে তার ইমিউন সিস্টেম আর ভাইরাসটাকে কাছে ঘেঁষতে দেয় না।


সাইমুম জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল, মনীষা ঘাড় সামান্য কাঁত করে বলল- “হ্যাঁ, আমি বেশ কদিন হলো সেরে উঠেছি”। সাইমুম কিছুটা আশ্বস্ত হলো। হঠাত মনীষার চোখদুটো কেমন যেন ভিজে উঠল, আর্দ্র কন্ঠে সে সাইমুমের দিকে ফিরে জিজ্ঞেস করল- “ কেমন আছো তুমি?”


সাইমুম তেঁতো হাসল, কেমন আছে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। গত দুই মাস এই বিছানাতেই একপ্রকার পড়ে আছে, সামান্য যা চলাফেরা করে তাও এই ঘরের ভিতরেই। স্পাই ড্রোনটা দিনে একবেলা খাবার দিয়ে যায়, তাতেই নিভু নিভু করে চলছে।


মনীষা উঠে দাঁড়িয়ে এপ্রোনটা গায়ে জড়িয়ে ব্যস্ত ভঙ্গীতে বলল- “ তৈরি হয়ে নাও সাইমুম, তোমাকে নিয়ে আমি একটা সিকিউরড ফ্যাসিলিটিতে যাব”

সাইমুম আঁতকে উঠল, কি বলছে মনীষা এসব! পাগলের মতো হড়বড় করে বলল-
“কি বলছ এসব! তুমি জানোনা যে ভাইরাসের কোনো হোস্ট পেলেই তাকে মেরে তার ডেডবডি জ্বালিয়ে দেয়া হচ্ছে! আমাকে বাইরে নিয়ে যেও না মনীষা, ওরা আমাকে মেরে ফেলবে। আম এ বাড়িতে একটা ওয়েপন বেসড সিকিউরিটি সিস্টেম চালু রেখেছি বলেই আজও কোনো রকমে বেঁচে আছি, আমায় বাঁচাও মনীষা!”


মনীষা কিছুক্ষণ অবাক হয়ে সাইমুমের উদ্ভ্রান্ত দৃষ্টির দিকে তাকিয়ে রইল, তারপর শান্ত কন্ঠে বলল- “তুমি কিছুই শোনোনি? ভাইরাসটার যে এন্টিডোট ড.মিলার আবিষ্কার করেছেন সে খবর তোমার কানে আসেনি?”


মনীষার কথা শুনে আনন্দে সাইমুমের চোখ নেচে উঠলো, এতো বড় খবর তার কানে আসেনি! ইঁদুরের মতো গর্তে এতোদিন সে এসব না জেনে বসে আছে! বহুকষ্টে উঠে বসে আগ্রহের স্বরে জিজ্ঞাসা করল,“ ড.মিলার? যিনি COVID-24 এর এন্টিডোটটা বানিয়েছিলেন!?”


মনীষা মুখ তুলে হেসে বলল-“ হ্যাঁ, তুমি এটা জানতে না! আমি তোমায় কত জায়গায় খুঁজেছি জানো? কতদিন ধরে খুজছি জানো?” তারপর হঠাত মনীষার নীল চোখ দুটো অভিমানে ভিজে উঠলো, “ তোমার আন্ডারগ্রাউন্ড এন্টারেন্সে আজ যখন ঢুকছিলাম তখন তোমার সিকিউরিটি সিস্টেম আমার উপরে গুলি চালিয়েছিল জানো? তুমি যদি খেয়াল না করতে তাহলে আমি এতক্ষণে লাশ হয়ে পড়ে থাকতাম!”


সাইমুম ব্যস্ত ভঙ্গীতে কোনোমতে দাঁড়িয়ে টলতে টলতে মনীষার কাছে এসে দাঁড়িয়ে বলল, “ তোমার কোথাও লাগেনি তো?”
মনীষা জবাব দিলো না, আহত চোখে মেঝের দিকে তাকিয়ে রইল।


বিষয়টাকে চাপা দেয়ার জন্যই সাইমুম কন্ট্রোল প্যানেলের দিকে এগিয়ে গেলো, এই সিকিউরিটি সিস্টেমের আর প্রয়োজন নেই। মনীষাকে সে ফিরে পেয়েছে, নতুন একটা জীবন তার অপেক্ষায়।


সিকিউরিটি অফলাইনে রেখে সাইমুম মনীষার দিকে তাকিয়ে সামান্য হাসার চেষ্টা করল, তারপর বেরোবার পথে পা বাড়ালো। দু কদম হেঁটে পিছনে ফিরে দেখল মনীষা তখনো সেখানে দাঁড়িয়ে আছে। সাইমুম পিছিয়ে এসে মনীষার হাত ধরে বলল-“ কি করছ মনীষা? চল যাই?”
মনীষা অদ্ভূত স্বরে বলল, “অপেক্ষা করছি”


হলওয়েতে কয়েক জোড়া বুটের শব্দ পাওয়া গেলো। ছোট বদ্ধ ঘরটাতে ব্রাশ ফায়ারের কান ফাটানো শব্দের কয়েক মুহূর্ত আগে বিদ্যুৎস্পৃষ্টের মতো সাইমুমের মনে পড়ল, মনীষার চোখ কখনো নীল ছিল না, মনীষার চোখ ছিল বাদামি, গাঢ় বাদামি!


ফেস মাস্কটা খুলে ফেললেন মিস ওয়াটসন। বডিটাকে র্যা পিং করে ডাম্প করার অর্ডার দিয়ে পরের টার্গেটের বায়ো খুললেন। নাম শেরমান, বয়স ৩৬, প্রেমিকার নাম সুস্মিতা। সুস্মিতার ফেস মাস্কটা মুখে চাপিয়ে আন্ডারগ্রাউন্ডের বাইরে পা চালিয়ে চাপা গলায় বললেন, “ব্লাডি ফুলস!”


                                     

Comments

Popular posts from this blog