Posts

Showing posts from 2020
Image
                                            একটি সংক্ষিপ্ত মৃত্যু                                                           আসিফ মাহমুদ জীবন অন্ধকারে ঠাসা বদ্ধ দেয়ালদুটোর মধ্যে টলতে টলতে মুখ থুবড়ে পড়ে গেল সে, বেরোবার আর কোনো পথ নেই! অবশ্য পথ থেকেও লাভ নেই, বুকের পাজড়ের ভিতরে হাতুড়ি পেটানোর মতো ধুক ধুক শব্দটা বলে দিচ্ছে বিষ ইতিমধ্যেই হৃদপিণ্ডে পৌছে গেছে। হৃদপিণ্ড থেকে এই বিষ ধমনী শিরা আর কৈশিকজালিকা ছাড়িয়ে পৌছে যাবে প্রতিটি কোষ থেকে কোষান্তরে। হঠাত মুখ থেকে এক খাবলা রক্ত উঠে এলো, এ রক্ত নিশ্চিত মৃত্যুর সংকেত! নিজের রক্ত দেখে নিজেই চি চি করে হেসে উঠল সে, বদ্ধ উন্মাদের হাসি। বাবার মুখটা কি স্পষ্ট মনে আছে তার? কিংবা  রান্নাঘরে প্রেমিকার সাথে হওয়া শেষ চুম্বন? সেকেন্ডের শেষ কাটার সাথে প্রতিটি স্মৃতি চোখের সামনে এসে ঘুরছে। ছোটবেলায় মায়ের সাথে রান্নাঘরের লুকোচুরি খেলা,কৈশরে বন্ধুদের সাথে কৌশলে ফাঁদ এড়িয়ে যাবার প্রতিযোগিতা, বিস্কুট খেতে দেখে প্রেমে পড়া প্রেয়সীর মুখ,যৌবনের উত্তেজনায় কেটে যাওয়া সেসব রাত, যমজ সন্তানদের নিষ্পাপ চেহারা, প্রতিটি স্মৃতি এখন সোনার চেয়েও মূল্যবান। তার দেহ নিস্তেজ হয়ে আস
Image
                                                                        প্রেমমৃত্যু                                                                           লেখকঃ আসিফ মাহমুদ জীবন  মনীষা অদ্ভুত রকম নীলভ চোখে সাইমুমের দিকে তাকিয়ে আছে, তার মুখে মৃদু হাসি। মনীষাকে মনিটরের পর্দায় দেখে বিছানাতে শুয়েই প্রচন্ড রকম চমকে উঠেছিল সাইমুম, মেয়েটা যে বেঁচে আছে তা সে কল্পনাও করতে পারেনি! মনীষা এগিয়ে এসে সাইমুমের বাম হাত মুঠোয় পুরে নিল, আঁতকে উঠলো সাইমুম, মেয়েটা করছেটা কি! সাইমুমের মুখের ভাব দেখেই মনীষা হেসে বলল, -“ভয়ের কিছু নেই সাইমুম, COVID-32 এর জিনোম সিকোয়েন্সটাই এমন যে কেউ এ ভাইরাসে আক্রান্ত হবার পর সুস্থ হয়ে গেলে তার ইমিউন সিস্টেম আর ভাইরাসটাকে কাছে ঘেঁষতে দেয় না। সাইমুম জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল, মনীষা ঘাড় সামান্য কাঁত করে বলল- “হ্যাঁ, আমি বেশ কদিন হলো সেরে উঠেছি”। সাইমুম কিছুটা আশ্বস্ত হলো। হঠাত মনীষার চোখদুটো কেমন যেন ভিজে উঠল, আর্দ্র কন্ঠে সে সাইমুমের দিকে ফিরে জিজ্ঞেস করল- “ কেমন আছো তুমি?” সাইমুম তেঁতো হাসল, কেমন আছে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। গত দুই মাস এই বিছানাতেই একপ্রকার পড়ে আছে,
Image
একুশের ভোর পত্রিকায় প্রকাশিত আমার গল্প "“ বাঙালি আগন্তুক”" লেখকঃ আসিফ মাহমুদ জীবন রেহান আমার সামনে ভাঙা চেয়ারে হেলান দিয়ে অন্যান্য বাচ্চাদের মতোই থেকে থেকে হাত-পা নাড়াচ্ছে, জিভ বের করছে, মাথা নাড়ছে, আবার মাঝে মাঝে লুকিয়ে আমার দিকে তাকাচ্ছে। ছেলেটাকে দেখে কেউ বুঝতেও পারবে না যে আট-দশটা বাঙালি বাচ্চাদের মতো সে বাংলা বলতে পারেনা। এতে রেহানের অবশ্য কোনো দোষ নেই, দোষ আপা-দুলাভাইয়ের, বিশেষ করে আপার। হাজার হোক, মাতৃভাষা তো মানুষ মায়ের মুখেই শেখে। আমেরিকায় জন্ম বলে যে শেকড় ভুলে দমাদম ইংরেজিই শেখাতে হবে, এ কি কথা! রেহান ইতস্তত ভাব কাটিয়ে শেষ পর্যন্ত আমাকে চোস্ত ইংরেজিতে জিজ্ঞাসা করল, “ So, you are my uncle? “ আমি ত্যালতেলে হেসে মাথা নুইয়ে সায় দিলাম যে আমিই তার হতভাগ্য মামা। হতভাগ্য বলার যথেষ্ট কারণ আছে। অনার্স শেষ করে যে ছেলে বাপের টাকায় টঙের দোকানে বসে চা খায়, মাঝে মাঝে দোকানের পিছনের দিকে গিয়ে সস্তা সিগারেটও টানে, তাকে হতভাগ্য বললে খুব একটা চোটপাট হবে না। রেহানকে আমি এই প্রথমবারের মতো দেখছি। দুলাভাই আপাকে নিয়ে আমেরিকাতে গিয়েছিলেন বছর আটেক আগে, কাজের ব্যস্ততায়
Image
বইয়ের নামঃ দ্যা এ্যালকেমিস্ট লেখকঃ পাওলো কোয়েলহো অনুবাদঃ মাকসুদুজ্জামান খান বিশ্বসাহিত্যে কয়েক দশক পর পর এমন একটা বই বের হয় যা পাঠকের জীবনকে আমূলে বদলে দেয়। পাওলো কোয়েলহো’র লেখা দ্যা এ্যালকেমিস্ট এমনই একখানি বই। পৃথিবীব্যাপী ২৫ মিলিয়নেরও বেশি বিক্রি হয়েছে এ বই, অনূদিত হয়েছে ৫৪ টি ভাষায়। দ্যা এ্যালকেমিস্ট পাঠকের কাছ থেকে পেয়েছে আধুনিক ক্লাসিকের মর্যাদা। সান্তিয়াগো নামের এক কিশোর রাখালকে নিয়ে এ কাহিনীর অভূতপূর্ব বুনন। মরুপ্রান্তরের ছেলে সান্তিয়াগোর ভ্রমণের নেশা। দেশ-দেশান্তরে সে ঘুরে বেড়ায় নতুনত্বের খোঁজে, নতুন মানুষের খোঁজে, নতুন বইয়ের খোঁজে। পরিবর্তনে মানুষের খুব ভয়, সান্তিয়াগো ভয় পায় না। দুঃসাহসে ভর করে পাড়ি দেয় মরুভূমি, পথে নানা শঙ্কা তবু রক্তে অভিযানের কি অদম্য নেশা! হঠাত সান্তিয়াগো স্বপ্ন দেখে, অদ্ভুত সব স্বপ্ন! সে স্বপ্নের অর্থ ধরে গুপ্তধনের খোঁজে বেরিয়ে পড়ে সে। আবারো নতুন মানুষ, নতুন পরিস্থিতি কিন্তু বুকে স্বপ্ন একটাই, পিরামিড। সান্তিয়াগো প্রতারিত হয় কিন্তু ভেঙে পড়ে না। মরুভূমি তাকে সান্ত্বনা দেয়, দেয় পথ চলার নতুন উদ্যম। রাখাল এই ছেলে জানতে পারে মানুষ বাঁচে প
Image
                                আমার নানাভাই                                                 আসিফ মাহমুদ জীবন গতকাল আমার নানার তেরোতম মৃত্যুবার্ষিকী ছিল। আমার নানা যখন মারা গেলেন তখন আমার বয়স সাড়ে চার ছুই ছুই। বিকেলবেলা তাকে মাইক্রোতে উঠিয়ে মিলিটারি হাসপাতালে নেয়া হলো, তিনি রাতে বাড়ি ফিরলেন লাশ হয়ে। সেই রাতে আমায় কেউ ডাকেনি, আমি নিজেই উঠেছিলাম। মধ্যরাতে চার বছর বয়সি কোনো শিশু যদি ঘুম থেকে উঠে দেখে যে বারান্দার মেঝেতে তারই সর্বক্ষণের বন্ধু নিথর হয়ে শুয়ে আছে আর তাকে ঘিরে পরিচিতরাই গগনবিদারী চীৎকার দিয়ে রাতের আকাশ বাতাস ভারি করে ফেলছে, সেটা আর যাই হোক সুখকর দৃশ্য নয়। আমি অবাক হতে পারিনি, শিশুরা সহজে অবাক হয় না। খুব চুপচাপ হয়ে আমি বারান্দায় ঠেস দিয়ে বসে নানার দিকে তাকিয়েছিলাম, নানার মুখে তখনও সেই শান্ত সৌম্য হাসি। মৃত্যুও সে হাসির সৌন্দর্য ম্লান করতে পারেনি। প্রচণ্ড বিলাপের মাঝে সেই হাসি দেখে আমি কখন সেই রাতে ফের ঘুমিয়ে পড়েছিলাম তা আমার নিজেরও মনে নেই। নানাকে গ্রামের মানুষ জানতেন মিলিটারি নামে। মুক্তিযুদ্ধের পর তার সেনাবাহিনীতে যোগদানের কারণেই সম্ভবত এমন নামকরণ। কৃষিকাজ থেকে শুরু
Image
                              কবিতাঃ আমি সেদিনই বখে গিয়েছিলুম                                                                  আসিফ মাহমুদ জীবন মতির দোকানে সেদিন হিঙরে কচুরি চলছে, ডুবো তেলে ভাজা, দেখলেই জিভে জল আসে বিশ্বাসের ছেলে আধ-খাওয়া কচুরি এক শীর্ণ বোষ্টমির মুখে ছুড়ে বলেছিল,‘লে কুত্তা, খা!’ আমি তখনই লিকলিকে দেহ নিয়ে বিশ্বাসের সেই ষণ্ডা ছেলেকে দুপ্রস্থ ঠেঙিয়েছিলাম, আমি জানি, আমি সেদিনই বখে গিয়েছিলাম। সাইজির গান হয় প্রতি রাতে, আড়ঙের ঘরে প্রাণ জ্বলে একতারায়; ধোয়া ওড়ে না, বোতল গড়াগড়ি যায় না, মাদক ঐ একখানাই, একতারার গান! বাবা বললে,‘ওসব ফকিরে কাজ, ছোটলোকের জাত বিকানো’ সে রাত্তিরে আমার ঘর ফাঁকা রইল, আমি তখন সাইজির গানে ঢুলছি; আমি বেশ জানতুম, আমি সেদিনই বখে গিয়েছিলুম। গল্প পড়ায় সেবার খুব নেশা ধরে গেল, রবীন্দ্র আর বঙ্কিম মিলে রক্তে সৃজনের নাচন জাগাল; পাশের বাড়ির কাকা এসে বাবায় সুবুদ্ধি দিলে, ‘ ছেলের মতিগতি তো সুবিধার নয়, ঘাড় গুঁজে ওসব কি পড়ে! জব্দ করো ক্ষণিকে! কাঁচায় না নোয়ালে বাঁশ, পাকলে করে ঠাস ঠাস।’ বাবা সব বুঝলে, আমার বই বন্দী হলো রঙ্গিন কাঠের ফ্রেমে; যেদিন সাহিত্যের