বইয়ের নামঃ দ্যা এ্যালকেমিস্ট

লেখকঃ পাওলো কোয়েলহো

অনুবাদঃ মাকসুদুজ্জামান খান

বিশ্বসাহিত্যে কয়েক দশক পর পর এমন একটা বই বের হয় যা পাঠকের জীবনকে আমূলে বদলে দেয়। পাওলো কোয়েলহো’র লেখা দ্যা এ্যালকেমিস্ট এমনই একখানি বই। পৃথিবীব্যাপী ২৫ মিলিয়নেরও বেশি বিক্রি হয়েছে এ বই, অনূদিত হয়েছে ৫৪ টি ভাষায়। দ্যা এ্যালকেমিস্ট পাঠকের কাছ থেকে পেয়েছে আধুনিক ক্লাসিকের মর্যাদা।

সান্তিয়াগো নামের এক কিশোর রাখালকে নিয়ে এ কাহিনীর অভূতপূর্ব বুনন। মরুপ্রান্তরের ছেলে সান্তিয়াগোর ভ্রমণের নেশা। দেশ-দেশান্তরে সে ঘুরে বেড়ায় নতুনত্বের খোঁজে, নতুন মানুষের খোঁজে, নতুন বইয়ের খোঁজে। পরিবর্তনে মানুষের খুব ভয়, সান্তিয়াগো ভয় পায় না। দুঃসাহসে ভর করে পাড়ি দেয় মরুভূমি, পথে নানা শঙ্কা তবু রক্তে অভিযানের কি অদম্য নেশা!

হঠাত সান্তিয়াগো স্বপ্ন দেখে, অদ্ভুত সব স্বপ্ন! সে স্বপ্নের অর্থ ধরে গুপ্তধনের খোঁজে বেরিয়ে পড়ে সে। আবারো নতুন মানুষ, নতুন পরিস্থিতি কিন্তু বুকে স্বপ্ন একটাই, পিরামিড। সান্তিয়াগো প্রতারিত হয় কিন্তু ভেঙে পড়ে না। মরুভূমি তাকে সান্ত্বনা দেয়, দেয় পথ চলার নতুন উদ্যম। রাখাল এই ছেলে জানতে পারে মানুষ বাঁচে পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী বলে, সে বলের নাম আশা। সে জানতে পারে এই বিশ্বেরও একটা আত্মা আছে, সে আত্মা পরিশুদ্ধ হয় মানুষের নিষ্পাপ আনন্দে। মানুষের নানা স্বপ্ন থাকে, এই স্বপ্ন মানুষকে ছুটিয়ে নিয়ে চলে জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত। কিশোর সান্তিয়াগো মরুভূমির ভাষা শেখে, সাইমুমের মাঝেও সে ভাষার সুর কি প্রচন্ড মর্মস্পর্শী! পার্থিব সম্পদ বহতা ধারার আঘাতে জেগে ওঠে, আবার সেই ধারার আঘাতেই বালির ঘরের মতো ভেঙে পড়ে।

কিশোর সান্তিয়াগোর জীবনে প্রেমের প্রবল জলস্রোত নিয়ে ফাতিমা হাজির হয়। সান্তিয়াগো শেখে পৃথিবীর বিশুদ্ধতম ভাষা, এ ভাষার নাম ভালোবাসা। কিন্তু স্বপ্ন এসে তাগাদা দেয় তাকে, সে তো থেমে থাকবার জন্য এ ধরায় জন্মায়নি। সান্তিয়াগো ফের স্বপ্নের পিছে ছোটে, পিছনে থেকে যায় তার পবিত্র পিছুটান। গুপ্তধনের খোঁজ পায় সান্তিয়াগো, সে গুপ্তধন নিজ হাতে সান্তিয়াগোর হাতে তুলে দেয় মরুভূমি। সে গুপ্তধন আর কিছুই নয়, বিশুদ্ধ ভালোবাসা।

পাওলো কোয়েলহো ‘দ্যা এ্যালকেমিস্ট’ উপন্যাসের মধ্যে দিয়ে জীবনকে চিনতে শিখিয়েছেন। মেঘের আড়ালে যেমন সূর্য হাসে, ঠিক তেমনি আমাদের জীবনের চরম দুঃসময়ের পরেই আসে সুসময়। মানুষের তাই কখনো ভেঙে পড়া উচিত নয়। পৃথিবীর প্রতিটি মানুষ এ গ্রহের ইতিহাসে একটা কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালন করে যা সে নিজেও জানে না। প্রতি প্রাণ তাই মূল্যবান। এই সব প্রাণগুলো যখন তাদের স্বপ্নের পিছনে ছোটে, জীবন কোনো না কোনোভাবে তাদের সাহায্য করে। কাম্য বস্তুর পেছনে ছুটে চলা মানুষ যদি তা নাও পায়, তবু যা পায় তা আকাঙ্ক্ষার বাইরে।

দ্যা এ্যালকেমিস্ট’ জীবন বদলে দেয়া বই, প্রেরণা দেয়া বই, সপ্নকামী মানুষের বই। এ বই মানুষকে স্বপ্নের পেছনে ছুটতে শেখায়, স্বপ্নকে বাস্তব বানাতে শেখায়। এজন্যই, আমার পড়া সেরা বইগুলোর মধ্যে ‘দ্যা এ্যালকেমিস্ট’ চিরজীবন থাকবে। বুক রেটিং-৫/৫
                                                        

Comments

Popular posts from this blog