বিষয়ঃ আবরার ফাহাদ হত্যা

লেখকঃ আসিফ মাহমুদ জীবন

সকাল থেকেই মা আস্থিরভাবে এঘর ওঘর ছোটাছুটি করছে। মাঝে মাঝে আমার কাছে এসে নিচুস্বরে জিজ্ঞাসা করছে, “ছেলেটাকে কি সত্যি পিটিয়ে মেরেছে?”। আমি প্রত্যেকবার মাথানিচু করে সায় দিচ্ছি। এ দেশে এর চেয়ে বেশি কথা বলার অধিকার আমার নেই। আবরার হত্যার গল্প আমার অশীতিপর নানির কানেও পৌছেছে। তিনি সারাদিন আমার ঘরে বসে আমার গায়ে হাত বোলাচ্ছেন আর বলছেন, “ নানাভাই রে, তুই ওইসব ফেসবুক-টেসবুকে কি সব লিখিস! আর লিখিস নে রে, তোরও মেরে ফেলবে।” আমি শুনছি আর হাসছি, আমি কি লিখব! বেড়াল হয়ে বাঘের গর্জন করা কি শোভা পায়! একদমই না! আমি বাঙ্গালির চেতনায় বড় হওয়া বাঙালি, আমার মুখেও কি এসব মানায়! উহু, আমি চুপ করেই থাকব। মা-নানির মিছিমিছি কি সব অদ্ভূত চিন্তা! সাগর-রনি, তকী, তনু, বিশ্বজিৎ, নুসরাত...এরপর লিস্টের নতুন সংযোজন আবরার। লিস্ট যখন আছে, বড় তো হবেই। বাংলার সব সূর্যসন্তানদের ঠাই হবে সে লিস্টে। তারপর একদিন সে লিস্টে কাগজের অভাব পড়বে, সেদিন হয়ত নাম লেখার জায়গাটুকু পাবো না। কি করেছিলো আবরার? ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছিল? ভারতবিরোধী পোস্ট? কেন! কেন এমন পোস্ট দেবে! এ দেশে জন্মেছে, এ দেশের নিয়ম-কানুন মানবে না! এ দেশের নিয়ম চুপ করে থাকা, এই ঠিক আমি যেমন রয়েছি। নাহ, ছেলের আদব-লেহাজের বড়ই অভাব। বড়ভাইদের সাথে মিলেমিশে থাকা উচিত ছিল, মাঝে মাঝে তাদের পা ধরে চুকচুক করে চুমু খাওয়া উচিত ছিলো। এর বাইরে গেলে আরও কত বেয়াক্কেল আবরারের রক্তে আমাদের হাত রঞ্জিত হবে। রোজ হাশরের দিন আমরা সেই রক্তমাখা হাতে খোদার সামনে হাজির হব। আমাদের হাত চিৎকার করে বলবে-এই দেখ খোদা! এই রক্ত ভাই আবরারের রক্ত, এই রক্ত তকীর রক্ত, এই রক্ত বিদগ্ধ নুসরাতের রক্ত, এই রক্ত আমার বোন তনুর রক্ত। এতো জনের রক্তে রঞ্জিত হয়েও আজকের মতোই সেদিন চুপ ছিল এই বাঙালি। সেদিন হাজারো আবরার অট্টহাসি হেসে চিৎকার করে বলবে,
অন্যায় যে করে আর অন্যায় যে সহে
তব ঘৃণা তারে তৃণ সমদহে
অনেক বেফাঁস কথা বলে ফেলেছি,বাঙালির পেট বড্ড পাতলা! নিজের গা বাঁচিয়ে নেওয়াটা আবশ্যকীয়। জয় বাংলা।                  

                               

Comments

Post a Comment

Popular posts from this blog