গল্পঃ অভিশাপ

লেখকঃআসিফ মাহমুদ জীবন

সময় খ্রিস্টপূর্ব ১৬২৫,স্থান আলাতিল শহর ,মিশর, নতুন একটা শহর। শহরটা ইতিমধ্যে সুরজদেব রাও এর সম্মানে বিখ্যাত হয়ে উঠেছে। এখানকার বর্তমান শাসনকর্তা চতুর্থ ফেরাউন, আতেনহাম। সূর্যদেবতাকে বিশেষ সম্মান জানানোর কারণে এই নাম তিনি পেয়েছেন। তার আগের নাম ছিল আখেনহাম। কোন এক অদ্ভুত কারণে ফেরাউন হিসেবে খুব একটা জনপ্রিয়তা অর্জন করতে পারননি আখেনহাম, এক কারণ হিসেবে তিনি অবশ্য মিশরের ধর্মীয় সংস্কারকে দায়ী করেন। প্রাচীন মিশরীয়রা অনেকগুলো দেবদেবীর পুজা করত, তার মধ্যে আনুবিস তো ছিলই। কিন্তু ধর্মটাকে নতুন করে ঢেলে সাজিয়েছেন। তার রাজ্যের জনগণকে শুধু সূর্যদেব আর সূর্য দেবী আয়েন এর পূজা করার অনুমতি দিয়েছেন। হটাত করে আনুবিসকে এমন অসম্মান করা কিছু জনগন মেনে নিতে পারেনি, বিদ্রোহের পাঁয়তারা করেছে। তাদের ধড়ে মাথাটা অবশ্য শেষ পর্যন্ত আর টেকেনি। এখন রাজ্য শান্ত, অনেক বছর হয়ে গেল শাসন করছেন আখেনহাম। যখন রাজ্যের গোড়াপত্তন করছিলেন তখন তিনি ছিলেন টগবগে যুবক, শরীরে রক্ত ছিল গরম, বহু নারীর কামনার বস্তু ছিলেন তিনি, নারীর চোখের সে মাদকতা উপেক্ষা করাই ছিল তার নেশা। এখন তিনি বৃদ্ধ, সত্তরের কোঠায় বয়স। বয়সের ভারে যতটা না তিনি ভারাক্রান্ত, তার চেয়ে বেশি চিন্তিত রাজ্যের ভবিষ্যৎ উত্তরাধিকার নিয়ে। আজও পর্যন্ত কোন সন্তানের পিতা হবার সৌভাগ্য তার হয়ে ওঠেনি।

নিজের বিশ্রামকক্ষে আধশোয়া হয়ে বসে ছিলেন আখেনহাম, তার চোখ দূরের বিস্তীর্ণ ভূমির দিকে। প্রাসাদের এ কক্ষ থেকে পুরো রাজ্যটা দেখা যায়। আখেনহাম তাকিয়ে ছিলেন বটে কিন্তু তার ভাবনা ছিল অন্যদিকে। কিছুদিন আগেই থুতমাস এসে খবর দিয়ে গেছে, ঔষধটা তৈরি হচ্ছে। এটা নিয়েই বেশ চিন্তায় আছেন আখেনহাম, যদি কাজ না করে! ঠিক এ সময় একটা অপূর্ব সুবাসে পুরো বিশ্রামাগার ভরে গেল, চোখ না ঘুরিয়েই আখেনহাম বুঝলেন নেফারতিতি এসেছে। আখেনহামের চতুর্থ স্ত্রী, নেফারতিতি। মাত্র পচিশ বছর বয়সেই আখেনহামের কাছে নিজের একটা বিশেষ অবস্থান তৈরি করে নিয়েছেন তিনি।টানা টানা চোখ, মিশরীয় রমণীর মতো কাজল কালো চুল আর অপূর্ব দেহকাঠামো যেকোনো বয়সের পুরুষের মনে প্রেম জাগাতে বাধ্য করবে। রাজ্যের যেকোনো বিষয় নিয়ে নেফারতিতির সাথে খোলামেলা আলাপ করেন আখেনহাম। লোকে ধারণা করে, অন্য স্ত্রীদের চেয়ে সুন্দরী আর বুদ্ধিমতী হওয়ায় আখেনহামের মনে নেফারতিতির জন্য ভালবাসা একটু বেশি। আর তাই, উত্তরাধিকারহীন অবস্থায় মারা গেলে হয়ত নেফারতিতিই হবে ভবিষ্যৎ রানী। মানুষের এ ধারনার কারণে ইতিমধ্যেই নেফারতিতি বিশেষ সম্মান পাচ্ছে সবার কাছে। ফলশ্রুতিতে অন্যান্য রানীদের বিষদৃষ্টিতে পরিণত হয়েছেন তিনি।

“ এসো প্রিয়তমা, সকাল থেকে তোমার অপেক্ষায় ছিলাম,” গলায় যথাসম্ভব প্রেম ভাব এনে কথাগুলো বললেন আখেনহাম। নেফারতিতি কক্ষে প্রবেশ করছে। পরনে স্বচ্ছ-ফিনফিনে রাজকীয় পোশাক, টানা টানা কাজল চোখ, নেফারতিতিকে দেখে আরেকবার প্রেমে পড়লেন আখেনহাম।নেফারতিতি অর্থ সুন্দর নারী, নামটা সার্থক হয়েছে পুরোপুরি।
“ মহামান্য” ধীরে ধীরে আখেনহামের কোলে বসলেন নেফারতিতি।
“ বল কি বলতে চাও।“ নিজেকে কিছুটা সামলে নিলেন আখেনহাম, কাউকে হটাত করে এমন ভাবে কাছে আসতে দেন না আখেনহাম, কিয়াকেও না। কিন্তু নেফারতিতির কথা আলদা, বুড়ো বয়সেও যে তিনি নেফারতিতির প্রেমে পরেছেন টা বেশ বুঝতে পারছেন।
“ আজকে কি সুখবর দিবেন বলেছিলেন যেন।“ অনেকটা উৎসুক হয়ে জিজ্ঞাসা করল নেফারতিতি।
“ কখন বলেছি!” নিজের উপরেই বিরক্ত হয়ে গেলেন আখেনহাম, তার স্মৃতিশক্তি কি ধীরে ধীরে লোপ পাচ্ছে নাকি।
“ কাল রাতে, বিছানায়” বলেই সলজ্জ হাসল নেফারতিতি, আখেনহাম মুগ্ধ দৃষ্টিতে নেফারতিতির গালের রক্তিমাভার দিকে তাকিয়ে থাকলেন, ঘটনাটা তার মনে পড়েছে। থুতমাসের ঔষধের কথাটাই তিনি বলতে চেয়েছিলেন। থুতমাস লোকটার সাথে তার পরিচয় খুব বেশিদিন না। বছর দুয়েক আগে সীমান্তর রক্ষীদের কাছে ধরা পড়ে সে, আখেনহামের কাছে আনা হলে সে জানায় যে নানা গুপ্ত বিদ্যায় সে পারদর্শী, রাজ্যের নানা কাজ তাকে দিয়ে রাজা করাতে পারবেন। আখেনহাম তাকে নিজের একটা মূর্তি গড়ে দিতে বলেন। থুতমাস তার কথা রেখেছিলো, বিশালাকৃতির আখেনহামের মূর্তি তারই বদৌলতে আলাতিল শহরের কেন্দ্রবিন্দুতে সগৌরবে দাঁড়িয়ে আছে।
“ হ্যাঁ, আসলে তোমাকে মূর্তির ব্যাপারটা বলতে চেয়েছিলাম, তোমার আর কিয়ার মূর্তি বানানো প্রায় শেষ, থুতমাস খবরটা দিয়ে গেছে“ ঔষধের ব্যাপারটা আপাতত চেপে গেলেন আখেনহাম।
“ ও আচ্ছা।“ কিয়ার নাম শুনে নীরস কণ্ঠে জবাব দিলো নেফারতিতি, কিয়াকে দুই চোখে দেখতে পারেনা সে।থুতমাসের নাম শুনে একটু ঘোরের মধ্যে চলে গিয়েছিলো নেফারতিতি। সুগঠিত দেহ, পুরুষালি চেহারা যে কোন নারীর মন হরণ করে নেবে। থুতমাসকে কম ইঙ্গিত দেয়নি সে, কিন্তু থুতমাস গ্রাহ্য করেনি। থুতমাসের এই অগ্রাহ্য মনোভাব অসহ্য মনে হয় নেফারতিতির, নিজের কামনায় উপচে পড়া দেহের দিকে একবার দেখে নেয় সে, কি নেই তার? তবু কেন এ অবহেলা!

থুতমাস বেশ চিন্তায় আছে। একসাথে দুই দুটো কাজের বোঝা তার আর সইছে না। একজন সহকর্মীকে নিয়েছিলেন, কিছুদিন পরই বুঝতে পারলেন যে সে গণ্ডমূর্খ ছাড়া কিছুই না। রানী নেফারতিতি আর কিয়ার মূর্তি তৈরির দায়িত্ব তাকে দেয়া হয়েছে, কিন্তু নেফারতিতি এসে তাকে শাসিয়ে গেছে যেন তার মূর্তি কিয়ার চেয়ে ভাল হয়। নেফারতিতি সম্ভবত ভবিষ্যৎ রানী, তার ক্রোধানলে দগ্ধ হবার কোন ইচ্ছে থুতমাসের নেই। তাই একটা বিশেষ কেমিক্যাল সে বানাচ্ছে, রানী নেফারতিতির মূর্তিতে মাখিয়ে দিলে সেটা জীবন্ত নেফারতিতির মতই সুন্দর দেখাবে। এ বিষয়ে খুব একটা ভাবিত নয় সে, সে চিন্তা করছে ঔষধের ব্যাপারটা। রাজাকে একবার ভুল করে নিজের চিকিৎসাবিজ্ঞানের উপর আয়ত্তের কথা বলে ফেলেছিলেন তিনি। বলাই কাল হয়েছে, রাজা তাকে সন্তান জন্মদানের জন্য কোন ঔষধ তৈরি করতে বলেছেন, যা খেয়ে তিনি তার উত্তরাধিকার রেখে যেতে পারেন। এমন ঔষধ থুতমাসের অজানা নয়, কিন্তু সেটা সামান্য উর্বরদের ক্ষেত্রেই কাজ করে। থুতমাস রাজাকে পরীক্ষা করে দেখেছে, রাজা সন্তান জন্মদানে পুরোপুরি অক্ষম। কিন্তু এ কথা রাজার সামনে বলা মানেই তৎক্ষণাৎ মৃত্যু। কিছুক্ষন পর রাজার সাথে তার দেখা করার কথা, কি বলবে তাই ভেবে পাচ্ছে না থুতমাস। যতদূর জানে রাজচিকিৎসকও রাজার এ ব্যাপারে অবগত, কিন্তু তিনিও মুখ ফুটে কিছু বলেননি, জানের মায়া কার বা নেই! তার সাথে নেফারতিতির আরেকটা ঝামেলা শুরু হয়েছে। সেদিন নেফারতিতির কথায় আর চাহনিতে যে স্পষ্ট কামনার আহব্বান ছিল তা বুঝতে খুব একটা বেগ পেতে হয়নি তাকে। আখেনহামের প্রিয়পাত্র সে, তার সাথে বিশ্বাসঘাতকতার ফলাফল শুভ হবে না তা থুতমাস জানে। কিন্তু নেফারতিতি বড্ড জেদি, তার একুশ জন চাকরকে নিজহাতে শ্মিরচ্ছেদ করার ঘটনা অনেকেই জানে।

“ মহামান্য রাজা, আমাকে ডেকেছিলেন” আখেনহামের ব্যাক্তিগত কক্ষে ঢুকে অবনত দৃষ্টিতে বলল থুতমাস। থুতমাসকে দেখে ভিতরে ভিতরে উত্তেজিত হলেও নিজেকে সংযত রাখলেন আখেনহাম।
“ তোমাকে একটা ঔষধ তৈরি করতে বলেছিলাম থুতমাস।“ স্বাভাবিকভাবে বললেও নিজের কৌতূহলী স্বর চেপে রাখতে পারলেন না আখেনহাম।
“ জি, আমি চেষ্টা করে যাচ্ছি।“ রাজার অক্ষমতার বিষয়টা বেমালুম চেপে গেল থুতমাস। এত অল্প বয়সে প্রাণটা খোয়াতে চায়না সে। কিন্তু কদিন সে এমনভাবে চালাবে? থুতমাসের কথা শুনে তেলেবেগুনে জ্বলে উঠল আখেনহাম।
“ চেষ্টা? গত ছয় সূর্য তো শুধু এই চেষ্টাই করে যাচ্ছ, ফলাফলের তো কোন হদিস নেই। স্পষ্ট শুনে রাখো থুতমাস, যদি আর এক সূর্যের মধ্যে তুমি ঔষধ তৈরি করতে না পারো, তোমার গর্দান থাকবে না। “
আখেনহামের কথা শুনে কেঁপে উঠল থুতমাস, সে বেশ ভাল করেই জানে যে আখেনহাম এক কথার মানুষ, তার কথার কোন নড়চড় হয় না। আর এক সপ্তাহ আছে তার আয়ু! দ্রুত আখেনহামের কক্ষ থেকে বের হয়ে আসলো সে। প্রাসাদের বাইরে আসার ঠিক আগ মুহূর্তে এক চাকরানী এসে খবর দিলো, নেফারতিতি আজ রাতে তাকে যেতে বলেছেন।

প্রাসাদের সেই কর্মচারীর পিছনে পিছনে যাচ্ছে থুতমাস। এর আগে কখনো প্রাসাদের ভিতরে নেফারতিতির সামনে পড়েনি সে, তার মাথায় একটা চিন্তাই ঘুরছে, রাতে কেন? প্রাসাদের একটা কক্ষের সামনের এসে দাঁড়ালো কর্মচারী, তাকে ভিতরে যেতে বলে চলে গেল সে। ভয়ে ভয়ে ভিতরে ঢুকল থুতমাস, কক্ষে চাঁদের আলো ছাড়া কিছু নেই, সেই আলোয় নেফারতিতিকে দেখে মাথা ঘুরে উঠল থুতমাসের। সদ্য প্রস্ফুটিত গোলাপের ন্যায় দেখাচ্ছে তাকে, সচ্ছ পোশাকের অন্তরালে কোমল দেহবয়ব সুস্পষ্ট হয়ে ফুটে উঠেছে। হিতাহিতজ্ঞান হারিয়ে থুতমাসের উপর ঝাপিয়ে পড়ল নেফারতিতি। থুতমাস বুঝতে পারলো, বাঘিনীর গুহায় ঢুকেছে সে। এখান থেকে আহ্বানে সাড়া না দিলে মানহানির অভিযোগে প্রাণ হারাবে সে, আর নেফারতিতির আহ্বানে সাড়া দিলে তার ফলাফলেও খুব একটা ভাল কিছু হবে না। কিন্তু ততক্ষণে বড্ড দেরি হয়ে গেছে। নেফারতিতি তার কামাগ্নিতে ইতোমধ্যে থুতমাসকে বশ করে ফেলেছে। আখেনহাম তার কক্ষে জেগে আছেন, জেগে জেগেই নিজের শিশুসন্তানকে কল্পনা করে তিনি হাসছেন। তিনি জানেনই না প্রাসাদের অন্য পার্শ্বে সেই মুহূর্তে আদিম খেলায় মেতেছে তার বিশ্বস্ত প্রিয়তমা।

“ মহারানী নেফারতিতি সন্তানসম্ভবা” কথাটা কেন জানি গোমড়া মুখে বলেছিল রাজচিকিৎসক হুরাস। কিন্তু সে গোমড়া মুখ লক্ষ্য করার সময় আখেনহামের ছিল না,খুশিতে আটখানা হয়ে তিনি প্রচারে ব্যস্ত, ভবিষ্যৎ রাজার আগমন হচ্ছে। থুতমাসের ঔষধে কাজ হয়েছে, তাকে যথাযথভাবে পুরস্কৃত করবেন বলে ঠিক করলেন আখেনহাম। কিন্তু সবার অগোচরে থাকা হুরাস চিন্তিত, যে আসছে সে মোটেই আহেনহামের ঔরস নয়, সে নিজে রাজার সন্তান জন্মদানে অক্ষমতা সম্পর্কে জানে, ভয়ে কখনো বলতে পারেনি। কিন্তু চারদিকে থুতমাসের এত নামডাক সে সহ্য করতে পারছে না। রাজাকে গিয়ে যদি সে এখন পুরো বিষয়টা খুলে বলে, রাজা তাকে কখনই বিশ্বাস করবেন না, উল্টো পৈতৃক প্রাণটা হারাতে হবে। রাজা ইতোমধ্যে রানিকে আলাদা যত্নের জন্য আলাদা প্রাসাদে রাখছেন। তাকে এখন অধিকাংশ সময় রানী নেফারতিতির পাশে পাওয়া যায়, সেই রানীর বিরুদ্ধে কিছু বলার সাহস কার আছে!

থুতমাসের নিজের কাছে খুব ছোট মনে হচ্ছে। আখেনহাম স্বয়ং তার বাড়িতে এসে তাকে জড়িয়ে ধরেছিলেন, তাকে অকল্পনীয় পরিমান অংকে পুরস্কৃত করেছেন। তিনি যদি আদেও জানতেন যে এইসবকিছুর পিছনে মূল ঘটনা কি, তবে কি হতো? ভাবতেও গা শিউরে ওঠে থুতমাসের।

হুরাস আজ খুব আনন্দিত। প্রমাণ সে পেয়ে গেছে, কিন্তু তার মনে যথেষ্ট সংশয় আছে রাজা এ প্রমাণে বিশ্বাস করবেন কি না। প্রমাণ হল রানীর খাস চাকরানী, সেই শুধু এই ব্যাপারে জানত। বহু কষ্টে গুপ্তচর লাগিয়ে চাকরানিকে এ খবর বলতে বাধ্য করা হয়েছে। খুব একটা শক্ত প্রমাণ না হলেও এতে যে থুতমাস সংযুক্ত তা জেনে খুব খুশি হয়েছেন হুরাস। এবার ব্যটার গর্দান যাবেই। কিন্তু প্রমাণ না করতে পারলে তার নিজের গর্দানও জায়গায় থাকবে না। হুরাস শুধু সঠিক সময়ের অপেক্ষায় আছে, সঠিক সময় আসামাত্র সে তার কাজ শুরু করবে।

সারা রাজ্য আজ অবাক বিস্ময়ে মূর্তি দুটোর দিকে তাকিয়ে আছে, কিন্তু তাদের নজর কেড়েছে নেফারতিতির মূর্তি। মূর্তিটা দেখে মনে হয় যেন জীবন্ত নেফারতিতি এসে দাঁড়িয়েছে, থুতমাসের নামডাক আগের চেয়ে অনেকবেশি বেড়ে গেছে, আখেনহাম তাকে উপদেষ্টার পদ দেবার জন্য নেফারতিতির সাথে পরামর্শ করবেন বলে প্রাসাদ থেকে বের হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ঠিক সে সময় হুরাস এসে দাঁড়ালেন। যাত্রায় বিঘ্ন ঘটলেও বেশ খোশমেজাজে ছিলেন আখেনহাম। বেশ কদিন ধরেই লক্ষ্য করছেন হুরাস কিছু বলতে চাচ্ছেন কিন্তু পারছেন না। হুরাস আজ প্রস্তুতি নিয়েই এসেছেন, সকল ধাপ তার ছক কাটা হয়ে গেছে।

“ মহামান্য সূর্য পূজারী আতেনহাম, মহামান্য রাজা আখেনহাম, অতি জরুরি একটা কথা আপনাকে বলা আমার কাছে নিজের কর্তব্য বলে মনে হয়েছিলো।“ অনেক কষ্টে একটা ভূমিকা টানল হুরাস।
“ দ্রুত বল, আমাকে নেফারতিতির প্রাসাদে যেতে হবে।“ হুরাসকে তাগাদা দিয়ে বললেন আখেনহাম।
“ কথাটা মহারানী নেফারতিতিকে নিয়েই, মহারাজ, আমি আপনাকে অনুরধ করব, পুরোটুকু বলার সুযোগ এ অধমকে দেবেন। “ হুরাসের কথা শুনে আখেনহামের মুখের বলিরেখা চিন্তায় স্পষ্ট হয়ে উঠল। হুরাস কে আগে কখনো এতটা স্পষ্টভাবে কথা বলতে শোনেননি তিনি। ঘাড় নেড়ে সম্মতি জানালেন আখেনহাম।
কথার কিছুটা খেই হারিয়ে ফেললেও ধীরে ধীরে শুরু করল হুরাস,” মহারাজ, আপনার নিশ্চয় মনে আছে, বেশ কয়েক সূর্য আগে আমি আপনার সন্তান সক্ষমতা পরীক্ষা করেছিলাম। আমি পরীক্ষার ফলাফলও পেয়েছিলাম, কিন্তু আপনি ক্রোধান্বিত হবেন বলে তা আর বলে ওঠা হয় নি।“ হুরাসের কথা শুনে মুহূর্তে দপ করে উঠলেন আখেনহাম, তবু শান্ত রাখলেন নিজেকে, হুরাস্কে তিনি পুরো কথা শোনার ওয়াদা করেছেন, তার কথার মূল্য আছে।
“ মহারাজ আপনি …… আপনি সন্তান জন্মদানে কোনভাবেই সক্ষম নন, পৃথিবীর কোন ঔষধের মাধ্যমে আপনাকে সক্ষম করে তোলা সম্ভব নয়।“ হুরাসের কথা শুনে এবার আর নিজেকে শান্ত রাখতে পারলেন না আখেনহাম। ত্রাহি চিৎকার ছেড়ে বললেন,
“ তোমার কথার অর্থ বুঝতে পারছ হুরাস! তুমি মহারানী নেফারতিতির দিকে কলঙ্কের আঙুল তুলছ, এত বড় দুঃসাহস তোমার হয় কি করে!” রাগে কাঁপতে কাঁপতে চেঁচিয়ে উঠলেন আখেনহাম। হুরাস বুঝেছিল যে রাজা এমন একটা কিছুই করবে, কিন্তু এতটা ভয়ানক হয়ে উথবে তা ভাবতে পারেনি। বহুকষ্টে মিন মিন করে সে বলল, “ মহারাজ, আমি প্রমাণ সহ এসেছি।“
আখেনহাম নিজেকে শান্ত করার চেষ্টা করলেন, বিশ্বাস আর অবিশ্বাসের মাঝামাঝি এখন তার অবস্থান। সন্দেহের বীজ তার ভিতরে ঢুকে গেছে। হুরাস বুঝতে পারছে এভাবে অপদার্থের মতো দাঁড়িয়ে থাকলে তার প্রাণবায়ু বের হতে বেশি সময় লাগবে না, আখেনহামের কোমরে ঝোলানো তলোয়ারেই তার জীবনের যবনিকা হবে। তাই দ্রুত সে চাকরানিকে নিয়ে হাজির হল। গত দুই সূর্য ধরে এই চাকরানীর উপর অকথ্য নির্যাতন চালানো হয়েছে মুখ ফুটে সত্যিটা বের করার জন্য।
“ মহারাজ, এই সেই প্রমাণ, মহারানী নেফারতিতির পরকীয়ার চাক্ষুষ প্রমাণ আছে এই চাকরানীর হাতে।“
আখেনহাম স্থির দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন,” সে কে?” আখেনহামের গম্ভীর প্রশ্ন শুনে তৎক্ষণাৎ ভয়ে কাঁপতে লাগল নেরিসা নামের চাকরানী।
“ মহামান্য থুতমাস” চাকরানীর কথা শুনে মনে হল আখেনহামের পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে যাচ্ছে। থুতমাস! শেষ পর্যন্ত থুতমাস তার সাথে এত বড় বিশ্বাসঘাতকতা করল! আখেনহাম ধপ করে আসনে বসে পড়লেন। বৃদ্ধ বয়সের শেষ সপ্ন তার চোখের সামনে মিথ্যে হয়ে গেল!
“ আরও প্রমাণ হিসেবে মহারাজ” নাটকীয় ভঙ্গীতে বললেন হুরাস,” আমি থুতমাসকে খবর দিয়েছি। তার মুখ থেকেই সবকিছু শুনবেন।“ হুরাসের কথা শেষ না হতেই থুতমাস ঘরে ঢুকল, দূতের কাছে সে খবর পেয়েছে যে আখেনহাম তাকে ডেকে পাঠিয়েছেন। হুরাসের আগেই আখেনহাম বজ্রকন্ঠে বলে উঠলেন,
“ এত বড় বিশ্বাসঘাতকতা করার আগে কি তোর বুক বিন্দুমাত্র কাঁপল না?” আখেনহামের কথা শুনে থুতমাসের বুঝতে বাকি রইল না যে তার জীবন আর বেশিক্ষণের নয়। সে কোনোমতে বলল, “ আমার কোন দোষ ছিল না মহা……” কথা শেষ করার আগেই আখেনহামের বিশ্রামাগারে থুতমাসের ধড়বিহীন মাথা গড়াগড়ি খেতে লাগল।
রাজ্যের সবাই আজ জড় হয়েছে, নেফারতিতিকে জনসম্মুখে শাস্তি দেয়া হবে, বিশ্বাসঘাতকতার শাস্তি। না, শুধু মৃত্যু নয়, জীবন্ত মৃত্যু। মহারাজ আখেনহাম তার প্রাসাদের বারান্দায় উপস্থিত হতেই পুরো নগরি স্তব্ধ হয়ে গেল, সবার দৃষ্টি আখেনহামের দিকে। আখেনহামের চোখ রক্তলাল, বৃদ্ধ বয়সেও যেন ক্রোধের বশে যৌবন ফিরে এসেছে। তিনি তার জনগনের দিকে বজ্রকন্ঠে বললেন, “ মহান সূর্যদেব রাও আর পবিত্র দেবী আয়েনের সম্মানে আমি অভিশাপ দিচ্ছি, অপরাধের শাস্তি মৃত্যু দণ্ড, আর বিশ্বাস ঘাতকতার শাস্তি…… জীবন্ত মৃত্যু। বিশ্বাসঘাতক মারা যাবে, তার হৃদয় মৃত্যুযন্ত্রণা ভোগ করতে থাকবে অনন্তকাল।“
উপস্থিত জনগণ চুপ করে রইল। আখেনহামের হিংস্র রুপ তারা দেখেছে, কিন্তু এতটা হিংস্রতা তারা কল্পনা করেনি। নেফারতিতিকে জীবন্ত অবস্থায় কফিনে ঢোকানো হল, নেফারতিতির আর্তচিৎকার আর বাঁচার আকুতি আখেনহামের কর্ণকুহরে প্রবেশ করল না, তিনি মূর্তির মতো সবকিছু দেখলেন, পাশে হুরাসকে নির্দেশ দিলেন নেফারতিতির মূর্তি ভেঙে ফেলার জন্য, কোন বিশ্বাসঘাতকের মূর্তি নগরে থাকবে না।

বর্তমান সময়, ৫ জানুয়ারি, ২০১৯
ডঃ নিকেল নিকারসন মিশরে এসেছেন পুরো দল ধরে। দীর্ঘ ছয় বছর ধরে তিনি যে গবেষণা করছেন তার বাস্তবতা হয়ত তিনি পেতে পারেন। বিন্দুমাত্র সময় নষ্ট করেননি ডঃ নিকারসন। তার দুই বছরের সঙ্গি, এক কথায় তার সহকর্মী , টেড চ্যাঙ। টেড চ্যাঙ হায়ারগ্লিফিক্স বিষয়ে অভিজ্ঞ। মজার ব্যাপার হল টেড চ্যাঙও একই বিষয় নিয়ে গবেষণা করছিলেন। বছর দুয়েক আগে যখন তাদের পরিচয় হল, তখন একসাথে গবেষণার প্রস্তাব দেন ডঃ নিকারসন। চ্যাঙও রাজি হয়ে যান। তাদের গবেষণার বিষয় রানী নেফারতিতি। এই রানীকে নিয়ে নানা মিথ প্রচলিত আছে। কোন এক বিশ্বাসভঙ্গের কারণে চতুর্থ ফেরাউন তাকে অদ্ভুত উপায়ে জীবন্ত মমি করেন। মিথ অনুসারে, নেফারতিতি কফিনে ঢোকার পরও জীবিত ছিলেন। কিন্তু আরেকটা মিথ বলে, তার উপরে সূর্যদেব রাও এর এক অভিশাপ আছে, যেটার কারণে সে কফিনেও জীবিত থাকবে। নিকারসন এসব অভিশাপ এ মাথা ঘামান না, তার কাছে মমিটাই আসল। মজার ব্যাপার হল, নেফারতিতির মমি আজ উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। ধারণা করা হয়, বিশ্বাসঘাতকতার অপরাধে তাকে অন্যত্র রাখা হয়। কোথায় থাকতে পারে তাই নিয়ে এতদিনের গবেষণা নিকারসনের। এতে টেড চ্যাঙের খুব একটা অবদান নেই। কয়েক সপ্তাহ আগে ডঃ নিকারসন এক অদ্ভুত সংবাদ পান। মিশরের পশ্চিমাঞ্চলে এক জনবসতিহীন এলাকায় অদ্ভুত চতুর্ভুজাকৃতির একটা পাথর খণ্ড আছে। পিরামিডের মতো উঁচু না, কিন্তু খণ্ডহীন অতো বড় পাথর সাধারণত দেখা যায় না। টেড চ্যাঙ এতে খুব একটা গুরুত্ব না দিলেও ভিতরে ভিতরে খুব উত্তেজিত হয়ে পড়েছিলেন ডঃ নিকারসন। তাই সময় নষ্ট না করে চলে এসেছেন। এয়ারপোর্ট থেকে সোজা হোটেলে উঠলেও বিকেল হতে না হতেই দলবল নিয়ে বেরিয়ে পড়েছেন। টেড চ্যাঙ একটু গাইগুই করলেও তাতে সাড়া দেননি ডঃ নিকারসন। প্রায় ছত্রিশ ঘণ্টা পর তার অদ্ভুত সে পাথরের কাছে পৌঁছালেন। সেদিনের মতো বিশ্রাম নিয়ে তার পরদিনই শুরু করলেন খোঁড়াখুঁড়ির কাজ। পাথরের গায়ে প্রাচীন হায়ারিগ্লিফিক্সে কিছু লেখা আছে, ডঃ কারসন হাজার চেষ্টা করেও তার মানে বের করতে পারলেন না। তাকে সারাদিন ছুটতে হচ্ছে, শ্রমিকদের তাগাদা দিতে হচ্ছে খোঁড়াখুঁড়ি জন্য। কিন্তু তিনি অন্য চিন্তায় আছেন, খোঁড়াখুঁড়ির অনুমতি তিনি নেননি, এই এলাকা সম্পর্কে খোদ মিশর সরকারও খুব বেশি জানে বলে মনে হল না। অনুমতি নিতে গেলে জানাজানি হতো, তার এত বছরের পরিশ্রম পুরোপুরি পণ্ড হতো। এই এলাকা জন বসতিহীন বলে এখনও এই খবরটা ছড়ায়নি, কিন্তু আসার পথে অনেককে এ ব্যপারে জিজ্ঞাসা করেছিলেন। স্থানীয় লোকেরা এটাকে শয়তানের পাথর বলে অভিহিত করে। ডঃ নিকারসন টেড চ্যাঙকে দেখে অবাক হয়ে যান, ভদ্রলোকের কি বিন্দুমাত্র কৌতূহলবোধ নেই! সারাদিন সে তাবুতে বসে থাকে, প্রথমদিন শুধু দেয়ালের লেখাগুলো টুকে নিয়েছিল, আর কিছুই না।

অভিযানের আজ ১২তম দিন। সন্ধ্যার একটু আগে ডঃ নিকারসন চমৎকার একটা খবর পেয়েছেন, মাটির নিচের দরজাটার খোঁজ পাওয়া গেছে। ডঃ নিকারসনের তর সইছিল না, কিন্তু শ্রমিকরা কোনমতেই রাত্রেবেলা ভিতরে ঢুকতে রাজি হল না, পথে নানা লোকের নানা গুজব শুনে তারা এমনিতেই জায়গাটাকে খুব একটা পছন্দ করতে পারেনি। ডঃ নিকারসন সিদ্ধান্ত নিলেন যে, পরের দিনই ভিতরে ঢুকবেন। খবরটা তিনি টেড চ্যাঙকে দিতে গেলেন, অবাক হয়ে দেখলেন চ্যাঙ একটা কাগজে নিবিষ্ট মনে কিছু দেখছে। ডঃ নিকারসন তাকে আর ঘাঁটালেন না, চ্যাঙ কেন হটাত এমন আচরণ করছে তা তিনি ভেবে পাচ্ছেন না।

মধ্যরাত। চ্যাঙ হ্যজাক জ্বালিয়ে সঠিক সময়ের অপেক্ষা করছে। ভিতরে ভিতরে প্রচণ্ড উত্তেজিত সে। একটু আগেই হায়ারগ্লিফিক্স এর অর্থ সে বের করেছে। অর্থটা বের করতে তার কম কষ্ট হয়নি। দেয়ালে লেখা আছে, ‘অপরাধীর শাস্তি মৃত্যু, বিশ্বাসঘাতকের শাস্তি জীবন্ত মৃত্যু’ তার মানে মিথ মিলে যাচ্ছে। ডঃ নিকারসনকে দু চোখে দেখতে পারেনা চ্যাঙ, যদিও তা উপর উপর মোটেই বুঝতে দেয় না। চ্যাঙ জেগে আছে, কারণ রাতেই দরজা খুলে ভিতরে ঢুকবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে সে। বিকেলবেলাতেই ডায়নামাইট দিয়ে প্রধান অংশটুকু উড়িয়ে দেয়া হয়েছে। একটা শাবল, কয়েকটা সার্চলাইট বক্স নিয়ে চোরের মতো রউনা হয় চ্যাঙ। হটাত তার মনে হল, এটা বিশ্বাসঘাতকতা হয়ে যাচ্ছে না? সে ডঃ নিকারসনকে দেখতে না পারলেও, ডঃ নিকারসন তাকে যথেষ্ট বিশ্বাস করে। কিন্তু পর মুহূর্তে ধন সম্পদের কথা চিন্তা করে পা চালায় চ্যাঙ। পুরো প্লান সে করে ফেলেছে। যতটুকু পারে ধনসম্পদ নিয়ে চম্পট দেবে সে। একটা চোরাচালান দলের সাথে কথাও পাকা হয়েছে। শাবলটা দিয়ে চাঙড় দেয় চ্যাঙ, একটু ফাকা হয়, হুপ করে গুমোট একটা হাওয়া চ্যাঙের উপর দিয়ে বয়ে যায়। ভিতরে ঢুকে সার্চলাইটগুলো এক এক করে বসিয়ে একসাথে জ্বালে সে। এ কি!কিচ্ছু নেই! বিশাল এক কক্ষের মাঝখানে একটা কফিন ছাড়া কিচ্ছু নেই। রাগে, দুঃখে হতাশায় মাথার চুল ছিঁড়তে থাকে সে, এত দিনের পরিশ্রমের এই ফসল। কফিনের দিকে এগিয়ে যায় চ্যাঙ, কফিনের গায়েও সেই একই লেখা। বহু কষ্টে কফিনটা খোলে চ্যাঙ। একটা মমি, কে বলে নেফারতিতি জীবিত?

“ নেফারতিতি, তুমি বেঁচে আছ? হাহাহাহা...” নিজের মনেই হাসতে থাকে চ্যাঙ। সে হাসি আনন্দের নাকি তাচ্ছিল্যের তা বোঝা দায়। চ্যাঙ যদি আরেকটু খেয়াল করত তবে সে দেখতে পেত, মমির বুকের বাম অংশ মুহূর্তে মুহূর্তে কেঁপে উঠছে।
ডঃ নিকারসন নিজের তাবুতে ডায়েরি লিখছিলেন। হটাত চাপা চীৎকারের শব্দ পেয়ে ছুটে আসেন বাইরে। শ্রমিকরা সবাই তখন চিৎকার শুনে বাইরে এসেছে, সবার মুখ ভীত-সন্ত্রস্ত। ডঃ নিকারসন চ্যঙ্গের তাবুর দিকে ছুটলেন, কেউ নেই ফাকা। তবে কি! শ্রমিকরা কেউ ভিতরে যেতে রাজি হচ্ছিল না, শেষে ডঃ নিকারসন একা যাচ্ছেন দেখে তার পিছু পিছু কয়েকজন এলো। প্রবেশপথ খোলা দেখে ডঃ নিকারসনের বুঝতে বাকি রইল না, টেড চ্যাঙ ভিতরে। ভিতরে প্রবেশ করে তিনি অবাক হলেন, একটা কফিন বাদে শূন্য কক্ষ। কফিনের ডালা খোলা, ডঃ নিকারসন দৌড়ে কফিনের কাছে গেলেন। একটা কফিনে পাশাপাশি দুটো দেহ, একটা মমি আরেকটা টেড চ্যাঙ, চ্যাঙ খোলা দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে, সে দৃষ্টিতে প্রানের কোন চিহ্ন নেই। ডঃ নিকারসন দীর্ঘশ্বাস ফেললেন, টেড চ্যাঙ কয়েক সহস্রপ্রাচীন অভিশাপটা ভুলে গিয়েছিলো, বিশ্বাসঘাতকতার শাস্তি জীবন্ত মৃত্যু!

( সমাপ্ত )
( গল্পটা একটু বেশি বড় হয়ে গেল, সেজন্য হয়ত পাঠক ধৈর্য হারাতে পারেন । কিন্তু গল্পের বিষয়বস্তু এমন ছিল যে এটা পর্ব করে লেখা যেত না। ধৈর্যচ্যুত হলে লেখক দায়ী নয়।)
                               


Comments

Popular posts from this blog