গল্পঃ টেলিপ্যাথিক নট ( Telepathic Knot)

লেখকঃ আসিফ মাহমুদ জীবন

পর্বঃ ০১

“ মেয়েটার নাম নিলা, আংকেল। পুরো নাম কি তবে নিলাঞ্জনা?” রাশেদের মুখে এমন কথা শুনে বেশ হতাশার দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকেন ড রায়হান। গত ৬ মাসে রাশেদের কোন উন্নতি হয়নি, অবনতিটাই যেন প্রতিদিন নিজের সম্প্রসারিত প্রভাবকে জানিয়ে দিয়ে যাচ্ছে।
“ রাশেদ, মেয়েটা তোমাকে বলেছে যে তার নাম নিলাঞ্জনা?”
“ জি আংকেল, কাল রাত্রে বলেছে।“
“ আর শেষে চড়ও মেরেছে?”
রায়হান সাহেবের প্রশ্নে বিব্রত হয়ে পড়ল রাশেদ। স্বপ্নের এই একমাত্র দিকই আজ তার এই সমস্যার কারণ।
“ রাশেদ, আমি তোমাকে একটা প্রশ্ন করেছি, কাল রাত্রেও কি মেয়েটা তোমাকে......”
“ জি আংকেল, কাল রাত্রেও।“
“তুমি ওকে জিজ্ঞাসা করনি যে কেন ও তোমাকে প্রতি রাত্রে এমন ভাবে চড় মারে?”
“ আমি স্বপ্ন দেখলে তো আমার নিজের উপর কোন নিয়ন্ত্রণ থাকে না। আমি ঘুমানোর আগে ভাবি যে আজকে জিজ্ঞাসা করব, কিন্তু মনে থাকে না। ”
“ তুমি কি তাইলে এটা বুঝতে পারছ যে এই স্বপ্ন তোমার অলীক কল্পনা ছাড়া কিছুই না। তোমার বয়স অনুযায়ী এমন স্বপ্ন দেখা খুব স্বাভাবিক।”
“ তাহলে আংকেল , চড়ের দাগটা?” রাশেদের প্রশ্নে দমে গেলেন ড রায়হান। এ প্রশ্নের উত্তর তার কাছে নেই।

রাশেদের কেসটা একটু জটিল। রাশেদ ইমতিয়াজ নবীর একমাত্র ছেলে। ইমতিয়াজ নবীর বড় ব্যাবসা, তার মোট সম্পত্তির হিসাব তিনি নিজেও জানেন না। রাশেদ তার বাবার মত হয়নি, হয়েছে সম্পূর্ণ ভিন্ন প্রকৃতির। ইমতিয়াজ নবি টাকা ছাড়া কিছুই চেনেন না, রাশেদ হয়েছে তার উল্টো। হয়ত টাকার প্রাচুর্যে থেকে এর কদর খুব একটা বুঝতে পারেনি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্সে পরছে সে। ঘটনাটা বেশ হয়েছে বেশ কয়েক মাস আগে। অন্যদিনের মত রাত্রে ঘুমিয়ে এক অদ্ভুত স্বপ্ন দেখল রাশেদ। সে একটা নদীর পাড়ে বসে আছে, তার পাশে একটা অনন্যা সুন্দরী মেয়ে বসে, লালপেড়ে শাড়ি পরে বসে আছে। মাঝে মাঝে রাশেদের দিকে তাকিয়ে সলজ্জ হাসছে সে। রাশেদের বয়সের যেকোনো ছেলের এমন স্বপ্ন দেখা খুবই স্বাভাবিক। সমস্যাটা হল স্বপ্নের শেষে, স্বপ্নের শেষে মেয়েটা হটাত প্রচণ্ড রেগে গিয়ে রাশেদকে চড় মারে। ঠিক সেই সময় রাশেদের ঘুম ভাঙে আর তার গালে সে মেয়েলি হাতের পাঁচ আঙুলের ছাপ স্পষ্ট দেখতে পায়। বেশ কদিন বিষয়টাকে ধামাচাপা দেবার চেষ্টা করেছে সে। প্রতি রাতে একই স্বপ্ন, শেষ দৃশ্যে একই রকম ভাবে চড়, এভাবেই চলছিল।

বিষয়টা প্রথম চোখে পড়ে রাশেদের মা আফিয়া বানুর। চড়ের দাগটা এতটা স্পষ্ট ছিল যে কাম্পাসেও যেত না রাশেদ। ছেলের হটাত এমন অস্বাভাবিকতা খুঁতিয়ে দেখতে গিয়েই চড়ের দাগটা দেখতে পান আফিয়া বানু। অনেক চেষ্টার পর রাশেদের মুখ থেকে পুরোটুকু শোনার পর তিনি নিঃসন্দেহে এটাকে জীনের আছর বলেই মনে করেছিলেন। ফলাফল হিসেবে রাশেদের গলা, বাজু, কোমর এ অনেকগুলো মাদুলি শোভা পেতে লাগল, উন্নতি কিছুই হল না। প্রতিদিন সকালেই রাশেদের গালে চড়ের দাগ পাওয়া যায়। রায়হান সাহেবকে আগে থেকেই চিনত রাশেদ। বাবার বন্ধু হবার সুবাদে অনেক বার বাসাতে দেখা হয়েছে। ড রায়হান পেশায় একজন মনস্তত্ত্ববিদ। তাই, রাশেদ তার কাছেই পরামর্শের জন্য গেল। রাশেদের কথা শুনে কেসটাকে বেশ সহজই মনে হয়েছিল রায়হান সাহেবের কাছে। রায়হান সদ্য যুবক, বিপরীত লিঙ্গের প্রতি তার স্বাভাবিক কামনা বাসনা থাকবেই। স্বপ্নের মেয়েটা হয়ত তারই প্রতিফলন। চড়ের দাগটা সম্পর্কে তার হাইপোথিসিস ছিল যে, হয়ত রাশেদ নিজেই নিজের অজান্তে চড় মারে। কিন্তু হাতের দাগ দেখে তা আবার মানা যায় না। কারণ হাতের দাগ স্পষ্ট মেয়েদের , রাশেদের হাত আর চওড়া। বেশ আত্মবিশ্বাসী ছিলেন রায়হান সাহেব নিজ ব্যাখ্যা সম্পর্কে। কিন্তু তিনি যে ফলাফল পেলেন তাতে তার যুক্তি ধোপে টিকলো না। প্রথমে তিনি রাশেদের সাথে একজনকে ঘুমাতে বললেন। মজার ব্যাপার হল, রাশেদ ওই রাতে আর স্বপ্ন দেখল না। কিন্তু দাগের রহস্য তো বের করতে হবে। অতি উৎসাহী হয়ে রাশেদের ঘরে সিসিটিভি লাগিয়ে রাশেদকে একা থাকতে দেয়া হল। আশ্চর্যের ব্যাপার যে সেদিন রাতেও রাসেদ স্বপ্ন দেখল না। কিন্তু রাশেদের ভিতরে একটা অস্থিরতা জন্ম নিল। সে জোর করে সব পরীক্ষা বাতিল করে দিল, সিসি টিভি সরিয়ে দিল । তখন ড রায়হানের বুঝতে বাকি থাকল না যে স্বপ্নের মেয়েটার প্রতি রাশেদ অনুরক্ত হয়ে পড়েছে। এসব এক্সপেরিমেন্টে সে স্বপ্নের মেয়েটাকে দেখতে পারছে না বলেই তার হটাত এত ব্যগ্রতা। বাধ্য হয়ে শুধুমাত্র রাশেদের হাত বেধে অন্য সবকিছু সরিয়ে নিয়ে তাকে ঘুমাতে দেয়া হল। সকালে দেখা গেল হাতবাধা রাশেদের গালে আবার চড়ের দাগ, যেন এইমাত্র কেউ চড় মেরেছে। এই ঘটনার পর রায়হান সাহেবের যুক্তি আর খাটল না। তখন থেকেই রাশেদের ব্যাপারটা নিয়ে নানাভাবে বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করছেন ড রায়হান, কিন্তু সমস্যার কোন কুল কিনারা পাচ্ছেন না।
                                               

Comments

Popular posts from this blog